পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ পটুয়াখালীর বাউফলের কালী মন্দিরে কুরআন শরীফ রেখে পালানোর সময় ইদ্রিস খান নামে এক ব্যাক্তিকে আটক করে পুলিশে সোপার্দ করেছে স্থানীয়রা। বুধবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার বগা ইউনিয়নের উত্তর রাজনগর-পালপাড়া সার্বজনীন কালী মন্দিরে এ ঘটনা ঘটে। আটক ইদ্রিস মন্দিরের ভেতরে কুরআন শরীফ রাখার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্তক্ষদর্শীরা জানান, ওই কালী মন্দিরের অদূরে দিলীপ পালের বাড়িতে হরিনাম কীর্তন হচ্ছিল। কীর্তন অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে। সন্ধ্যায় ইদ্রিছ খান নামের ঐ অচেনা ব্যাক্তিকে এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। রাতে কীর্তন অনুষ্ঠানে খাবারও খান ঐ ব্যাক্তি। রাত সাড়ে তিনটার দিকে কীর্তন আঙিনা থেকে ১০০ মিটার দূরে উত্তর রাজনগর পালপাড়া সার্বজনীন কালী ও শীতলা মন্দিরে ঢুকে কালীমূর্তির সামনে থাকা ঘটের উপর কুরআন শরীফ রেখে বের হয়ে যাওয়ার সময় তাকে দেখে ফেলে কৃত্তন কমিটির স্বেচ্ছাসেবকরা। তার গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তারা ঐ ব্যাক্তিকে ধরে ফেলে এবং মন্দিরের ঘটের উপর কুরআন শরীফ রাখা দেখতে পায়। এরপর তারা বাউফল থানায় খবর দিলে বৃহস্পতিবার ভোরে পুলিশ ইদ্রিছ খানকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
স্বেচ্ছাসেবক হৃদয় পাল, সঞ্জয় পাল, সৌরভ পাল, সজল পাল ও কার্তিক পাল জানান, কীর্তনে অনেক মানুষের সমাগম ঘটায় তারা নিয়মিত কীর্তন আঙিনার চারদিকে টহল দিচ্ছেলেন। গভীর রাতে একজন অচেনা লোককে কালী মন্দির থেকে বের হতে দেখে তাদের সন্দেহ হওয়ায় তারা ঐ ব্যাক্তিকে আটকায় এবং মন্দীরের ভেতরে গিয়ে কালীমুর্তির সামনে থাকা ঘটের উপরে কুরআন শরীফ রাখা দেখতে পায়।
কীর্তন কমিটির সভাপতি দিলীপ পাল জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে কীর্তন অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে। ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী আরো কিছু অনুষ্ঠান বাকি থাকলেও এই অনাকাঙ্খিত ঘটনার কারনে তা বাদ দেয়া হয়েছে। ঘটনার পর থেকে হিন্দু অধ্যুষিত উত্তর রাজনগর পাল পাড়ার সব পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
তিনি আরও জানান, দীর্ঘকাল থেকে আমরা বিভিন্ন ধর্মানুসারীরা একসঙ্গে বসবাস করছি কখনও এমনটা দেখিনি। এই একাত্বতায় চির ধরাতে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল ঈদের আগে সহিংসতা সৃস্টির লক্ষ্যে এ কাজ ঘটিয়েছে।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল-মামুন গনমাধ্যমকে জানান, আটককৃত ব্যাক্তির বাড়ি বাকেরগঞ্জ উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নে। সে দুমকি উপজেলার আঙারিয়া এলাকার কদমতলা আবাসনে থাকে। বুধবার বিকেলে পটুয়াখালী থেকে এমভি কামাল খান লঞ্চে উঠে বগা লঞ্চঘাটে নেমে ওই গ্রামে যায়। তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন জানানো হবে। হিন্দু সম্প্রদায়ের আতঙ্ক দূর করার জন্য ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার মোহম্মদ শহীদুল্লাহ জানান, ঘটনা তদন্তে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে কোন ছাড় দেয়া হবে না।