মোঃ জাহিদ হোসে, দিনাজপুর প্রতিনিধি।। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ বড় শীতলাই গ্রামের চুল কেটে মুখে চুনকালি দিয়ে স্কুলছাত্রী কিশোরীকে পৈচাশিক নির্যাতনের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় অবশেষ থানায় মামলা।
এজাহার নামীয় কুলসুম ও দেলজান নামের অভিযুক্ত ২ নারী গ্রেফতার হলেও ঘটনার মুলহোতা ম্যাডাম খ্যাত হ্যাডামওয়ালী শারমিন মাহবুব পলাতক রয়েছে ।
জানা যায় শীতলাই গ্রামে সুশিক্ষিত ঐ মহিলা হতদরিদ্র জনগনের স্বাস্থ্য সেবা, আশ্রয়হীনদের স্থানীয়ভাবে পুনর্বাসন, শিক্ষা খাতে জনহিতকর কাজ করে আসছেন।
তিনি নিজের জমিতে নিজস্ব অর্থায়নে দৃষ্টি নন্দন মায়ের বাড়ি নামকরণে একটি বিলাশ বহুল আবাস স্থাপন করেছেন।
সেখানে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ক্যাম্পাসের ভিতরে
‘মোহসেনা মা ও শিশুসেবা স্বাস্থ্য কেন্দ্র’ চলমান আছে।
জনকল্যানকর বেশ কিছু আইটেম ওর্য়াকের মাধ্যমে সেখানে তিনি কতিপয় অভাবী পরিবারের কর্নধার হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন।
সেই সুবাদে এলাকার একটি বিশেষ অংশে তিনি ম্যাডাম হিসেবে বহুল পরিচিত।
তিনি সীমিত কয়েকটি উপকার ভোগী পরিবারের হর্তাকর্তা সেজে আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
নিজেকে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্ষমতাধর ব্যক্তি ও কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে দাপটের সাথে ভাল কাজের অন্তরালে নানান অপকর্ম বীর দর্পে চালিয়ে গেলেও প্রতিবাদ করার সাহস পায় না বলে জানান বর্তমান ইউপি সদস্য হোসেন আলী ও সাবেক সদস্য মাহাবুব হোসেন চৌধুরী বাবুসহ অসংখ্য জনতার অভিযোগ রয়েছে।
গত ২ এপ্রিল’২৩ বিকেলে ম্যাডাম শারমিন মাহবুব ও তার কতিপয় সমর্থক মহিলা দল বেধে প্রতিবেশী দরিদ্র মোস্তাফিজুর রহমান অরুর বাড়িতে হামলা চালিয়ে তার ২য় কিশোরী স্কুল পড়ুয়া ১৪ (চৌদ্দ) বছরের মেয়েকে আটক করে মারপিট, জোর পুর্বক তার মাথার চুল কেটে, মুখে চুনকালি লাগিয়ে পৈচাশিক নির্যাতন করা হয়।
হঠাৎ নির্মম এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় অরুর পরিবারসহ এলাকাবাসী হতভম্ব হয়, বর্বর নির্যাতনের শিকার পরিবারটি কিংকর্তব্য বিমুঢ়, দিশেহারা হয়ে পড়ে।
বে-আইনি, চরম অন্যায়, মানবতা বিবর্জিত অমানুষিক মধ্যযুগীয় কান্ড ঘটিয়েও তিনি ক্ষ্যান্ত হননি, হুমকি দেয়া হয়েছে যদি কোন আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয় তবে জীবনের তরে শিক্ষা দেয়া হবে, তার হাত অনেক লম্বা, উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়বে, দেখে নিবে ইত্যাদি।
তাই অরুর পরিবার মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে দুইদিন ভয়ে গৃহবন্দি জীবন যাপন করে।
পরবর্তীতে বিষয়টি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও মিডিয়া’র নজরে আসলে তাদের সহযোগিতায় পুলিশ প্রটেকশনে নির্যাতিত পরিবারটি ঘটনার ২ দিন পর বীরগঞ্জ থানায় এসে ভিকটিমের মা শরিফা বেগম বাদী হয়ে ৫ এপ্রিল’২৩ রাতে মামলা দায়ের করতে সক্ষম হন।
এ ব্যপারে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী প্রধান অভিযুক্ত শারমিন মাহবুবের সাথে ঘটনার পর দিন একদল সংবাদকর্মী মুখোমুখি হলে তিনি বলেন, হ্যাঁ আমি আমার সর্মথিত অপরাপর মহিলাদের সাথে নিয়ে অরু মামার বাড়িতে গিয়ে তার কিশোরী মেয়ের মাথার চুল কাটার নির্দেশ দিয়েছি এবং চুল কর্তনের পর মুখে চুনকালি দিয়ে অপদস্ত করেছি।
তাতে আমার কে কি করতে পারে করুক, আমি কাউকে তোয়াক্কা করি না। তার মেয়ে দেহ ব্যবসায়ী ও চুন্নি, আমার ঢাকাস্থ গুলশানের বাসায় অবস্থান করে আসার সময় মোবাইল ও ডায়মন্ডের জিনিস চুরি করেছে। আমি ভদ্রতার খাতিরে আইনগত ব্যবস্থা নেই নাই।
ওদেরকে এলাকা ছাড়া করা উচিত এবং ভবিষ্যতে তাই করা হবে।
ওখানকার ২/৩ টা পরিবার নষ্টা, ওদেরকে সমাজের ভিতর রাখা ঠিক নয়। সমাজের হতদরিদ্রের মাঝে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করছি, দুষ্টের লালন করার জন্য নয়?
আমি কাউকে ছাড় দিব না, যা করেছি ঠিকই করেছি, কে কি করতে পারে করুক। নির্যাতিত কিশোরী মেয়েটি সম্পর্কে আরো অনেক কুরুচিপুর্ণ মন্তব্য করেন অভিযুক্ত মায়ের বাড়ির মালিক ঐ ম্যাডাম।
এক পর্যায় কিশোরীর বাবা’র সাথে জমি নিয়ে বিরোধ ছিল মর্মেও উল্লেখ করেন তিনি।
ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিচার দাবী করেছেন এলাকার সচেতন নাগরিক সমাজ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সকল পেশাজীবিরা।
পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজাহার নামীয় দুই নারীকে গ্রেফতার করলেও প্রধান অভিযুক্ত পালিয়ে গেছে।
স্পর্শকাতর, চাঞ্চল্যকর এই মামলার বাদী, ভিকটিম ও তাদের পরিবারের লোক জনের সাথে রাতেই থানায় এসে কথা বলেছেন ইউএনও বীরগঞ্জ (চলতি দায়িত্ব) রাজকুমার বিশ্বাস।
তিনি তাদেরকে ন্যায় বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন।
এ ব্যপারে বীরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সুব্রত কুমার সরকারের সাথে কথা হলে তিনি সত্যতা নিশ্চিত করে জানান কেউ আইনের উর্ধ্বে নন, অপরাধী যতবড় ক্ষমতাধর হউক না কেন, কোন ছাড় নেই, অদ্য ১০(৪)২৩ নম্বর মামলা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী অফিসার এস আই আশরাফুল ইসলাম জানান অভিযুক্ত ২ নারীকে গ্রেফতার করাসহ অন্যান্যদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে।
নিচের ছবিতে: বামে প্রধান অভিযুক্ত, ডানে নিচে নির্যাতিত ভিকটিম উপরে অভিযুক্তরা।