তপু রায়হান রাব্বি।। বিধাতার কি লীলাখেলা একই ঘরে দুটি সন্তান মানসিক প্রতিবন্ধী। গোয়াল ঘরের মধ্যে ছোট ছেলেকে শিকলে বন্দি করে ও বড় ছেলেকে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে সহপরিবার থাকলেও কোনদিন কাটে চিড়ামুড়ি খেয়ে। জনপ্রতিনিধির কাছে ঘুরতে ঘুরতে অবশেষে দিশেহারা। টাকা না দিতে পারায় হলোনা কোনো ভাতার কার্ড। এখন আর লোকলজ্জার ভয়ে যেতেও চাইনা কারো কাছে। এমনটিই বলেন ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার ২নং রামভদ্রপুর ইউনিয়নের গোয়াডাঙ্গা মধ্য পাড়ার গ্রামের (বেপারি বাড়ি) দিনমজুর মোঃ আজিজুল হক(৬৭)।
মানসিক প্রতিবন্ধীদের মা জয়গুন নেছা(৬১) জানান, আমার ২ ছেলে এক মেয়ে। ছোট ছেলে আনারুল ইসলাম(৩১) জন্মের পর থেকেই ঝিমঝাম থাকতো। তবে তাবলীগ জামাত, চিল্লা সহ ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। কিন্তু দিন দিন সে ঘর থেকে বের হতো না ? ঝিমঝাম আরো বেশি পরে ডাক্তারের চিকিৎসা করালে ডাক্তার বলেন সে মানসিক রোগী তাকে উন্নত চিকিৎসা করাতে হবে। চালাচ্ছিল চিকিৎসা । বড় ছেলে আলমগীর হোসেন(৪০) বিদ্যুতের টাওয়ার সাইটের পাইলিংয়ের কাজ করত। স্বামী প্যাডেল চালিত ভ্যানগাড়ি চালিয়ে সারাদিনে যা রোজগার করত এবং ছেলের রোজগারের টাকাদিয়ে চল তো পরিবারের খরচ ও ছোট ছেলের চিকিৎসা। পরে বড় ছেলেকে বিয়ে করানো হয় এবং ছোট মেয়ে কে বিয়ে দেওয়া হয়। আলমগীরকে বিয়ে করানোর পর পরই মেয়ে সন্তান হয়। দুই সন্তানের পর (যেখানে বিদ্যুতের টাওয়ারে কাজ করতো) কয়েকবার বিদ্যুতিক শর্ট খেয়ে আহত হয় সে। অবশেষে সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। করতোয়া বিভিন্ন অত্যাচার ? যাকে তাকেই কামড় সহ হাতের কাছে লাঠির, দা বা যেটায় পাই সেটা দিয়েই অন্যকে মারতে শুরু করত থাকে। পরে এলাকাবাসীর সিদ্ধান্তে তাকে থাকার গোয়াল ঘরের চৌকিতে শিকল দিয়ে বেঁধে তালা মারা হয়। এক পর্যায়ে তার স্ত্রী দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে রেখে চলে যায় বাপের বাড়ি। পরে আর কোন খোঁজ খবর রাখেনি কেউ।
অবশেষে বাবা আজিজুল ভ্যান বিক্রি করেও সন্তানদের চিকিৎসা চালিয়ে যান। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। অভাবের সংসারে অন্যের জমিতে দিনমজুরি করে বড় নাতিন আখিঁকে অল্প বয়সেই বিয়ে দেওয়া হয়। ছেলে ইমরান হোসেন(১২) বাড়ির পাশেই একটি মাদ্রাসায় পড়ে। ছোট মেয়ে বিথী আক্তার(১১) কে গোড়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণীতে পড়ে এখন।
স্থানীয়লোকজন ও উপজেলা যুবলীগ নেতা আশরাফুল জানান, এবিষয়টি কিছুদিন হলো আমি শুনেছি এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সত্যিই দুঃখজনক এ বিষয়টি। উনারা খুব কষ্টে জীবনযাপন কাঁটাচ্ছেন। জনপ্রতিনিধিরাও টাকা ছাড়া কোন সুবিধা দিচ্ছে না সরকারি।যে ঘরে নাতি নাতনী সহ দুই মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে বসবাস করেন সে ঘরে একটি গরুও পালেন। বড় ছেলে আলমগীরকে প্রায়১০ বছর যাবত শিকলে বেঁধে রাখছেন। মাঝখানে একবার তাকে ছাড়াও হয়েছিল পরে তার বাবা ও চাচাকে কামড়িয়ে ও লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে। পরে সকলের অনুরোধে তাকে শিকল মুক্ত করে দিলে কয়েক ঘন্টা পর দাদি মেহেরুন্নেসার বাম কান কেটে ফেলে দা’য়ের কুপে। পরে আবারো তাকে শিকলে বন্দি করা হয়। তাদের এই অসহায়ত্বের জীবন যুদ্ধের কাহিনী দেখে পাশের বাড়ির গ্রাম পুলিশের সদস্য কারিম তাকে একটি ১০ টাকা কেজি চাউল(ভিজিএফ) এর কার্ড করে দেন।
এ ছাড়াও স্থানীয় লোকজন এ বিষয়ে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন। যেন বিষয়টি খুব দ্রুতগতিতে প্রশাসনের আওতায় এনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই।