মোঃ জাহিদ হোসেন, দিনাজপুর প্রতিনিধি।।
তৃতীয় দিনে দিনাজপুরে অবৈধ দুটি ইটভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান ৪ লাখ টাকা জরিমানা। ভেঙে দেওয়া হয়েছে কাঁচা ইট ও ভাটা। কৃষি নির্ভর জেলা দিনাজপুরে সরকারি কোনো নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইটভাটা। এসব ইটভাটার মধ্যে চালু রয়েছে ২৪১ টি । যার মধ্যে ১৭৫ টি ইটভাটারই নেই কোন বৈধতা। মাত্র ৬৬ টি ইটভাটা চলছে সরকারি অনুমোদন নিয়ে। এদিকে অবৈধ এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। গত তিন দিনে দিনাজপুরে ৯ টি অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর এই অভিযান চালাতে গিয়ে দ্বিতীয় দিনে হামলার ও শিকার হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান বলেন, হিমালয় পর্বত থেকে পানির সাথে বেয়ে আশা পলি মাটি তৈরি হতে ৫০ থেকে ১ শ বছর সময় লাগে। এই পলিমাটি আমাদের কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। কিন্তু এই পলি মাটি এখন ব্যবহার হচ্ছে ইট ভাটাসহ রাস্তা ভরাট বাড়ির আঙিনা ইত্যাদি কাজে। কৃষি জমিতে ইটভাটা নির্মানের অনুমতি কৃষি বিভাগ থেকে দেওয়া হবে না। কৃষি জমিতে ইটভাটা করলে কৃষি জমির ফলন হ্রাস পায়।
জেলা কৃষি সম্রসারনণ অধিদপ্তরের উর্দ্ধতন এই কর্মকর্তার এই বক্তব্য এখন শুধুমাত্র কথাতেই রয়েছে। কৃষি নির্ভর এই জেলায় যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইটভাটা। সরকারি কোনো নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করেই যত্রতত্র গড়ে ওঠা এসব ইটভাটা এখন কৃষি নির্ভর এই দিনাজপুর জেলায় কৃষির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে উর্বর কৃষি জমির উপর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে, ঘনবসতি এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা। অধিকাংশ ইটভাটায় পরিবেশ বান্ধব কয়লার বিপরীতে অবাধে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। ট্রাক্টরের মাধ্যমে আশপাশের এলাকার ফসলি জমির মাটি এনে তৈরি করা হচ্ছে ইট। অবৈধ ইট ভাটার কারনে সাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে মানুষ। দিনে ওরাতের আধারে ট্রাক ও শ্যালো ইঞ্জিন চালিত ট্রলিতে করে বিভিন্ন স্থান থেকে মাটি এনে ইট ভাটায় ব্যবহার করছেন ভাটার মালিকরা।
পরিবেশ অধিদপ্তর দিনাজপুরের সহকারী পরিচালক রুনায়েত আমিন রেজা বলেন, দিনাজপুরে অসংখ্য ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে বর্তমানে চালু রয়েছে ২৪১ টি। এই ২৪১ টির মধ্যে ১৭৫ টি ইটভাটাই অবৈধ। বৈধ ইটভাটা মাত্র ৬৬ টি। তিনি বলেন, অবৈধ এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই অভিযান শুরু হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সুলতানা সালেহা সুমীর নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালতে গত তিন দিনে দিনাজপুরের ৯ টি অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে কাঁচা ইট ধংস করে দেয়া হয়েছে এবং ভাটা গুলি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং ভ্রাম্যমান আদালতে এই ৯ টি ইটভাটা মালিককে ১৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযানে তৃতীয় দিনে বুধবার ( ৬ মার্চ) দিনাজপুর সদর উপজেলার কিষানবাজার পূর্ব রামনগর এলাকায় দিনাজপুর সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলামের মেসার্স এম. বি. এম. ব্রিক্স এবং একই এলাকার নুর আমীন শাহ গং – এর এম. এইচ ইটভাটায় অভিযান চালানো হয়। অবৈধভাবে এই দুটি ভাটা পরিচালনার দায়ে দুই ভাটা মালিককে ২ লাখ টাকা করে মোট ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় এবং বুলডোজার দিয়ে চিমনি ভেঙে ভাটাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
প্রথম দিনে সোমবার ( ৪ মার্চ) দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে ৫ টি অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা ও ভাটাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আর দ্বিতীয় দিনে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার পূর্ব সাইতারা রাবারড্যাম সংলগ্ন মোকারম হোসেনের মালিকানাধীন এমএইচবি ব্রিক্স নামক অবৈধ ইটভাটায় ৪ লাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সুলতানা সালেহা সুমী। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ম্যাজিষ্ট্রেটদের বহন করা গাড়ির সামনের ও পিছনের দুটি গ্লাস এবং ভেকুটি ভেঙে দেয় এবং তাদের উপর হামলা চালায়। এতে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, পরিবেশ অধিদপ্তর সহকারী পরিচালক রুনায়েত আমীন রেজা এবং পুলিশসহ ৬ জন আহত হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। এ বিষয়ে চিরিরবন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে এবং পুলিশ ৩ জনকে আটক করেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর দিনাজপুরের সহকারী পরিচালক রুনায়েত আমীন রেজা জানান, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।