গোলাম মোস্তাফা, ফুলপুর প্রতিনিধিঃ কিছু মানুষ আমাদের পাশে না থাকলেও সাথে থাকে।তাঁদের কথা,শিক্ষা,আদর্শ,জীবনবোধ,এমনভাবে প্রভাবিত করে,তাঁদের অনুপস্থিতিতে ব্যাপারটা অন্যরকম হয়ে যায়।
বলছি ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের উত্তরকান্দা গ্রামের পল্লী চিকিৎসক মরহুম আলীম উদ্দিন আহমেদ এর কথা,আমৃত্যু যিনি গ্রামের মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে গেছেন তিনি।আজীবন ছিলেন গঙ্গাঋদ্ধি অববাহিকার ঋদ্ধ একজন মানুষ।
পরম করুণাময় নাকি ভালোমানুষ তাঁর কাছে দ্রুত নিয়ে যান,হয়তো তাই আমরা আরও বেশিদিন তাঁর সঙ্গ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হলাম।তাঁর ছায়া সরে গেল মাথার উপর থেকে,কিন্ত মায়া জড়িয়ে আছে অন্তরে,মননে।
তাঁর শারীরিক অনুপস্থিতি মনে হলেই কাঁদায়,ভাবায়,তাঁর আদর্শিক উপস্থিতি প্রতিমুহূর্তে জীবনের বাঁকে বাঁকে অনেক শিক্ষা দিয়ে যায়।
মানুষের সাথে সম্পর্কের মাপকাঠি তাঁর একটাই,মানবিক আচরণ।চেনা অচেনা স্বল্প চেনা,যে কেউ তাঁর কাছে এসে দাঁড়াত,কাউকে তিনি ফেরাতেন না।কারো উপকার হবে,সেই কাজ তিনি যেভাবেই হোক করতেন।
করেছেন সক্রিয় রাজনীতি,সমাজ সচেতন সুশিক্ষিত মানুষ।তাঁর চেনা জানা মানুষের তালিকায় যত প্রথিতযশা মানুষ ছিলেন,নিজের জন্য কখনো কিছু চান নাই,কিন্তু আশেপাশের যার যেমন প্রয়োজন,নিজে যেচে কাজ করে দিতেন।বিনিময়ে কিছুই চেয়ে নেননি,বরং মানুষ নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে কতো কি কথা দিয়ে বেমালুম ভুলে যেত,সেটা নিয়ে তাঁর কোন আফসোস ছিল না।
তাঁকে যে একবার দেখেছে,মনে রেখেছে।প্রাণখোলা হাসি,প্রাঞ্জল কথকতা আর প্রগাঢ় জ্ঞানে ভরপুর।আবার ব্যক্তিত্বে স্বতন্ত্র সমন্বয়।সমৃদ্ধ বর্ণিল জীবন তাঁর।
তাঁর সাফল্য,তিনি আজও বহু মানুষের মনে বাস করেন প্রচন্ড ভালোবাসায়।তাঁর কথা আজও চোখের কোনে পানি থাকলেও মুখে হাসি নিয়েই স্মরণ করেন স্বজন পরিজন এমনকি স্বল্পসময় পরিচিত মুখ।ধর্ম-বর্ণ আর্থ সামাজিক অবস্থান বা অন্য কোন প্রচলিত ভেদাভেদের মাপকাঠি তাঁর ছিল না।সবার সাথে আন্তরিক ব্যবহার করতেন,আন্তরিক ব্যবহার পেলে খুব খুশি হতেন।
শাসন,আদর,প্রশ্রয় সাহস,আবদার আহ্লাদ সব ছিল তাঁর ভাণ্ডারে।সম্পর্কে আমি তার ভাগ্নির ঘরের নাতি,আজন্ম আমি তাঁর পরিচয়ে পরিচিত হতে সবসময় পছন্দ করি।আমার জীবন বৃত্তান্তে তাঁর নাম ব্যবহার করার সুযোগ থাকলে,করতাম।তাঁর জন্য কিছু করা হয়নি।ডুবতে ডুবতে হাঁসফাঁস করে ভেসে ওঠা আমার জিবনে,কিছু করার উপযুক্ত হবার আগেই তিনি চলে গেলেন।
নেই,চিরতরে চলে গেছেন পরম শান্তির আশ্রয়ে।শূন্যস্থান পূরণ হয়না,কিছু ঠিক হয় না,শুধু আমরা অভ্যস্ত হই ক্ষত চিহ্ন ঢেকে রাখার নিয়ত চর্চায়।তাঁর মতো মানুষের স্থান পূরণ করা দুরের কথা,আশেপাশে চিন্তা করার মতো কেউ নেই।
আজ তাঁর চলে যাওয়ার দিন।মনে হয় এইতো সেদিন,সাল গণনায় বেশ অনেকদিন,স্মৃতির মণিকোঠায় জ্বলজ্বলে একজন মানুষ।তাঁকে ঘটা করে স্মরণ করতে হয় না,পরিবার পরিজন পরিচিত সবার মনেই সব সময় আছেন দারুণ ভালোবাসায়।কারন তাঁর স্নিগ্ধ নির্মল অতুলনীয় ভালোবাসা ভুলবার নয়।