ধোবাউড়া থেকে রুবেল মিয়া।। আমরা গরিব মানুষ! মাইনষের বাড়িত কামকাজ কইরা খাই। আমার চেরিডা মরতাছে টেহার লাইগ্গা চিকিৎসা করাইতাম পারতাছি না। দয়া কইরা আপনেরা আমার চেরিডারে বাঁচায়া দেওহাইন। এভাইবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন অসুস্থ আনু আক্তারের মা শহরবানু।
একসময় খেলাধুলা ও হইহুল্লোড় করে সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখত চঞ্চলপ্রকৃতির পরিবারের ছোট মেয়ে আনু। কিন্তু এখন তার নেই সেই চাঞ্চল্য ভাব। খেলতে পারে না কোনো খেলা। চিৎকার-চেঁচামেচির বদলে থাকে নীরব হয়ে। তার মুখে নেই কোনো হাসি। নেই ছোটাছুটি করার ক্ষমতাও। কারণ, রোগাক্রান্ত হয়ে সে এখন শয্যাশায়ী। দীর্ঘদিন ধরে শুয়ে শুয়ে নিদারুণ যন্ত্রণায় দিন পার করতে হয় তাকে।
ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া উপজেলার গোয়াতলা ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের চা বিক্রেতা জাকির মিয়ার মেয়ে আনু আক্তার।
সরেজমিনে দেখা যায়, জরাজীর্ণ একটি ঘরের এক কোণে চৌকিতে শুয়ে আছে ২২ বছর বয়সী এক সন্তানের জননী আনু আক্তার। তার চার মাস বয়সী ছেলে সন্তান জন্ম হওয়ার পর থেকে মুখে খাবারের কোন স্বাদ না থাকায় শুধু পানি পান করে শরীরের হাড় ব্যতীত আর কিছুই নেই। যেন জীবন্ত কঙ্কাল হয়ে শুয়ে আছে বিছানায়। করতে পারেনা কোন চলাফেরা। শরীরে কোন শক্তি না থাকায় কোলে নিতে পারে না চার মাস বয়সী অতিআদরের শিশু সন্তানকে।
কিন্তু অর্থের অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাটুকুও করাতে পারছে না তার হতদরিদ্র পরিবার। তার মুখ থেকে কেবল বের হয়ে আসছে মরণযন্ত্রণার চিৎকার ও বেঁচে থাকার আকুতি।
পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, চার বছর পূর্বে প্রেম করে বরিশালের বরগুনা উপজেলার শাওন মিয়ার সাথে বিয়ে হয় আনু আক্তারের। স্বামী শাওন মিয়া ঢাকায় চাকুরী করার কারণে বাপের বাড়িতেই থাকে আনু আক্তার। গত চার মাস পূর্বে একটি ছেলে সন্তান জন্ম হয় আনু আক্তারের।
ছেলে সন্তান জন্ম হওয়ার পর থেকেই শরীরে কোন শক্তি নেই মুখে কোন খাবারের স্বাদও নেই আনু আক্তারের। এমন রোগে জেলা এবং উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে কিছুদিন চিকিৎসা করানোর পর একটু সুস্থ্য হলেও আবার একই রোগে আক্রান্ত হয়ে বর্তামানে অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় বিছানায় দিন কাটে তার।
জীবন্ত কঙ্কাল হয়ে সারাক্ষণ বিছানায় পড়ে ছটফট করছে আনু আক্তার। নিজের হাত দিয়েও খেতে পারেনা কোন খাবার। পরতে পারে না কোনো জামাকাপড়।
অপরদিকে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা আনু আক্তারের চিকিৎসা করানোর মতো হতদরিদ্র পরিবারের কোন সামর্থ না থাকায়, তাকে সুস্থ করে তুলতে এলাকার লোকজন দফায় দফায় সহায়তা প্রদান করলেও প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা অসহায় এ আনু আক্তারের কোনো রকম খোঁজখবর নিচ্ছেন না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
ক্ষোভ প্রকাশ করে একই গ্রামের সাঈদ মিয়া বলেন, আনুর চিকিৎসার জন্য আমরা কয়েকবার সহযোগিতা করেছি। কিন্তু প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের এখন পর্যন্ত আনুর পাশে দাঁড়াতে দেখিনি। এটা খুবই দুঃখজনক। গরিব পরিবারের এই অসহায় আনু আক্তারকে বাঁচাতে চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে অচিরেই তাদের এগিয়ে আসারও অনুরোধ জানান তিনি।
সাবেক ইউপি সদস্য ফজলুল হক বলেন, বর্তমানে তার অবস্থা খুবই খারাপ। উন্নত চিকিৎসা করাতে হবে। আর তা করানো আনু আক্তারের পরিবার ও আমাদের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
আনু আক্তারের পিতা চা বিক্রেতা জাকির হোসেন বলেন, আমরার টেহা নাই। এইল্লাইগ্যা আমার মায়াডারে চিকিৎসা করাইতে পারতাছি না। আমি বাপ অইয়া মায়াডার এই যন্ত্রণা আর সহ্য করতা পারতাছি না।
হৃদয়ে গোয়াতলা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইফতেখার খান পাঠান মিল্টনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি আনু আক্তারের এই অসহায় অবস্থা দেখার পর তাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলাম। এতে অনেকেই সহযোগীতার হাত বাড়িয়েছেন। আরও কেউ যদি এগিয়ে আসেন, তাহলে আমরা সংগঠনের উদ্যোগে আনুর চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।
স্থানীয় এলাকাবাসী, অসহায় আনু আক্তারের জীবন রক্ষার্থে চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ধোবাউড়া- হালুয়াঘাট আসনের সংসদ সদস্য জুয়েল আরেং এমপি এবং উপজেলা চেয়ারম্যান ডেভিড রানা চিসিম ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফৌজিয়া নাজনীনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।